Saturday, November 10, 2018
Monday, November 5, 2018
Thursday, October 18, 2018
Monday, October 15, 2018
Thursday, October 11, 2018
Monday, October 1, 2018
Monday, September 17, 2018
Sunday, September 16, 2018
Tuesday, September 4, 2018
Sunday, September 2, 2018
Tuesday, August 7, 2018
Saturday, July 28, 2018
Wednesday, July 18, 2018
নিঝুম দ্বিপ ( নির্জনতায় নিজেকে ফিরে পাওয়া)
নিঝুম দ্বিপ ( নির্জনতায়
নিজেকে ফিরে পাওয়া)
নিঝুম দ্বিপ ( হাতিয়া,
নোয়াখালী)
ফেব্রুয়ারি ২০-২৪, ২০১৮।
(পর্ব ০১)
ব্যস্ত শহরে, ঠাস বুনোটের ভিড়ে,
আজো কিছু মানুষ, স্বপ্ন খুজে ফেরে...
এই বেস্ত ঢাকা শহর, এই ভিড়
কে কিছু সময়ের জন্য বিদায় জানিয়ে নিরজনতায় নিজেকে ফিরে পাবার আশায় আমার এইবারের
গন্তব্য ছিল নিঝুম দ্বিপ। সাথে ছিল প্রানের
টি জি বি টিম। J
আমাদের যাত্রা শুরু হল ২০
তারিখ মঙ্গলবার বিকেল ৫.৩০ টায়। আমি মাত্র রবিবার সকালেই চিটাগাং আর কক্স বাজার
ঘুরে এসেছি। অফিস এর পেরা, সাথে শরীর টাও
ক্লান্ত ছিল। কিন্তু কি আর করা, বলছি যেহেতু জাবই, টার মানে যেতে তো হবেই...। ( আয়
আইজকা)
সদরঘাট থেকে আমাদের লঞ্চ
ফারহান- ৩ ছাড়ার কথা বিকেল ৫.৩০ টায়। অফিস থেকে ৪ টায় রওনা করলাম। সবার আগেই
পৌঁছাইলাম ঘাট এ। তারপর সোজা গিয়া উঠলাম লঞ্চ এর ছাদে, আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।
একা একা কিছু সময় দাঁড়িয়ে জিবনের নানা হিসেব নিকেশ মিলানর চেষ্টা করলাম...।
আস্তে আস্তে বাকি সবাই আসা
শুরু করল। টি জি বি এর কুফা হস্ত ইমরান যথারীতি লেট লতিফ! সবাই মিলে আড্ডা দিলাম।
সাবা, তনিমা ওদের প্রথম লং ট্যুর ছিল। ওদের খুশি দেখে খুব ভাল লাগতাসিল। মনে
হচ্ছিল ভালই যাবে বাকি সময়টা...। কিন্তু!!!!
লঞ্চ ছাড়তে আর মাত্র ৫
মিনিট এর মত বাকি, কিন্তু তখনও সাদিয়া, প্রিতম সহ আরও ৫ জন এখনও রাস্তায় জামে
আটকান। মনে মনে আশঙ্কা করছিলাম যে অরা মনেহয় লঞ্চ টা মিস করবে। ...।
অবশেষে আশঙ্কাটাই সত্যি
হল!! লঞ্চ যথাসময়ে ছেড়ে দিল ওদের না নিয়ে। খুব বিরক্ত আর রাগ হইতাসিল। কিন্তু কি
আর করা। ওদের রেখেই যেতে হবে এখন। ভাগ্য ভাল ছিল যে ৩০ মিনিট পরে তাস্রিফ-৩ এর
আরেকটা লঞ্চ ছিল। ওদের অইতায় উঠে চলে আসতে বললাম। কিন্তু তারপরেও সবাই একসাথে গেলে
অনেক বেশি ভাল লাগত মনেহয়!
সবাই লঞ্চ এর ছাদে চাদর
পেতে বসে আড্ডা দিলাম, সাথে বাদাম, আচার আরও কি কি যেন খাইলাম। নদির দেউ এর তালে
তালে আমাদের মন টাও যেন একসাথে তাল মিলাছিল্ল। নদির বুক চিরে সূর্য অস্ত যাওয়া
দেখলাম সবাই একসাথে। শে এক মনমুঘধকর অনুভুতি!!
সন্ধার পরে শীতের প্রকোপ
বেরে জাওাতে সবাই কেবিন এ চলে গেলাম। পরে অইখানেই সবার পরিচয় পর্ব সেরে নিয়ে আমরা
গান বাজনা শুরু করলাম। কিভাবে যে সময় চলে গেল টের ই পাই নাই।
রাতের খাবারের আগে সবাই
আবার বাতাস খাইতে লঞ্চ এর সামনে এসে বসলাম। ওরে বাপরে বাপ।। মনেহয় উরাইয়াআ যেন
নিয়ে যাবে... কিনতুঁ মস্ত বড় একখানা চাঁদ, আর সাথে লাখ তারার মিতালি দেখে ভিতর
থেকে গান বের হয়ে আসলো। সবাই মিলে আবার গানা বাজনা করে রুম এর দিকে রওনা হইলাম...
ঠিক তখন ই ঘটলো এক মজার ঘটনা...।
সাবা, তনিমা আর প্রমা আপু
ছিল এক রুম এ। ওদের রুম কিভাবে জেন ভিতর থেকেই লক হয়ে গেল। অনেকেই এইখানে “সাহিরা
মারিক্কা দাইনি সফানিসবার” ভয়ে কাবু হয়ে
গেল। রাতে নাকি থিক্মত ওদের ঘুম ও হয় নাই... হা হা হা...
রাতের খাবার টা সেই ছিল।
গরম ভাঁট এর সাথে তাজা ইলিশ, আইল মাছ আর ঘন ডাল... মধু মধু!!!
এর মধ্যে অন্য লঞ্চ এ থাকা
বাকি ৫ জনের খবর নিলাম। অরাও নাকি ভাল মজাই করতাসে। যাক ভাল হইলেই ভাল।।
ঘুমাইতে ঘুমাইতে অনেক রাত
হয়ে গেসিল। সকালে উঠে দেখি আমরা প্রায় চলে আসছি হাতিয়া তে। জলদি ফ্রেশ হয়ে আমাদের
জন্য অপেক্ষা করা ট্রলার এ উঠে বসলাম।
ট্রলার ছেড়ে দেওয়ার পরে
নাকি আমি বইসা বইসা ঘুমাইসি, যদিও এর কোন প্রমান কেও দিতে পারে নাই... হা হা হা ;)
অবশেষে প্রায় ২ ঘণ্টা পরে
আমরা আমাদের সেই কাঙ্খিত নিঝম দ্বিপ এ পউছালাম। দূর থেকে দেখেই অনেক ভাল লাগতাসিল।
কেমন যেন নিরজন, নিরব একটা নগরী!!
কাদামাতিতে সবাই গড়াগড়ি
খাওয়ার পরে মরুভুমির পথ পারি দিয়ে চললাম আমাদের সেই সপ্নের রাজ্য “নিঝুম দ্বিপ”
উদ্দেশে।। সুনেছি সেইখানে গেলে নাকি নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়া যায় এক নিবিড়
নির্জনতায়... আসলেই কি তাই?????
পর্ব- ০২
নিঝুম দ্বিপ এর মানুষ গুলা খুব ই অমায়িক। নিজেরদের বাসায় নিয়ে
পানি খাওয়াইল। খুব ভাল লাগসে উনাদের ব্যাবহার। প্রায় ২০ মিনিট এর মত হাটার পরে ১
গ্লাস পানিও যেন অমৃতর মত লাগছিল।
অবশেষে অনেকক্ষন হাটার পরে
আমাদের নিঝুম রিসোর্ট এ আসলাম। আমি আর আমার সাথের ৫ জন অন্য রিসোর্ট এ চলে গিয়াছিলাম।
খুব এ হাস্যকর ছিল বেপারটা। হা হা হা
রিসোর্ট টা মাসাআল্লাহ খারাপ
না। আমরা একটা বিশাল রম এ ৪ জন ছিলাম। বিসাল বলার কারন এইটাই যে অই রম এ নাকি ২৪
জন মিলেও থাকা যায়!!
ফ্রেশ হয়ে বাইরে বসার একটা
সুন্দর জায়গা আছে। গাছের নিচে বসে ডাবের
পানি খেয়ে মনটাকে প্রশান্ত করলাম। আমি আগেই শুনছি এইখানে নাকি মহিষের দুধ এর
ফাটাফাটি মিষ্টি পাওয়া যায়। আমি ভাই আবার সেই লেভেল এর খাদক মানুষ। খাওয়ার নাম
সুনলেই খিদা লাগে...লল
বাইরে বের হয়ে দ্বিপ সেরাটন হোটেলে মহিসের দুধের
বিখ্যাত মিষ্টি খেলাম। ছোট ছোট মিষ্টি, নিমিষে ৮ টা মিষ্টি পেটের ভিতরে চালান করে
দিলাম!
এরপর আশেপাশে একটু ঘুরে
দেখে আবারো খাওয়ার জন্য তৈরি হইলাম। এইবার দুপুরের খাওয়া খেতে হবে।
গরম ভাত, সাথে ইলিশ মাছ আর
আসল আকর্ষণ ছিল ছোট চিংড়ি মাছ এই চিংড়ি মাছ দিয়াই সবাই ২-৩ প্লেট ভাত খাইসে... সেই
মজা!! না খাইলে পস্তাইবেন।
. হা হা হা পেট পুরে
খাইলাম। তারপর রম এ জেয়ে কিছুক্ষণ শরীরটাকে এলিয়ে দিলাম নরম বিছানায়।
এরপর আমাদের উদ্দেশে ছিল নিঝুম
দ্বিপ এর অন্যতম আকর্ষণ নিঝুম বিচ। সুনেছি অইখানে গেলে নাকি মন টা ভাল হয়ে যায়///
আসলেই কি তাই??? চলেন দেখব সবাই...
চলবে...।
পর্ব- ০৩
নিঝুম দ্বিপ এ আমাদের
বেশিরভাগ সময় কেটেছে নিঝুম বিচ এ। সকালে সূর্যোদয় দেখা, দুপুরে জলকেলি করা, বিকেলে
আপন মনে হাটা, সন্ধায় সূর্যাস্ত দেখা কিংবা গভীর রাতে চুপ করে শুয়ে ঢেউ এর গর্জন
সুনা। সব ই আমরা উপভোগ করেছি প্রান ভরে <3
পড়ন্ত বিকেলে আমরা নিঝুম
দ্বিপ এর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা “নিঝুম বিচ” এ আসলাম। সূর্য মামা টার আলো বিকিরনে
মগ্ন। বিচ এ আশার পরেই সেই বিখ্যাত পজ এ ছবি তুলা হল। কি!!
একটু পরেই সবাই যার যার মত
আলাদা হয়ে নিঝুম বিচ এর সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করতে শুরু করলাম। সূর্য মামার
আসাযাওয়ার খেলা, মনটা প্রশান্ত করে দেওয়ার মত বাতাস আর ঢেউ এর আওয়াজ চোখ বন্ধ করে
কান পেতে সুনা...। আহা!! এইতো জীবন!!!
জুতা খুলে খালি পায়ে পানির
মধ্যে হাটা শুরু করলাম। সেই অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।।
হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ১
ঘণ্টা পার হয়ে গেসে টের ই পাই নাই।
এর মাঝে খেজুর গাছ থেকে
সুস্বাদু খেজুরের রস খেয়ে উদর পূর্তি করলাম সবাই।
সূর্য তখন পশ্চিম দিকে অস্ত
যাচ্ছে। গ্রামের মেঠো পথ ধরে সবাই লাইন ধরে আমরা হেটে চলেছি বাজারের উদ্দেশে। সরিসা
ক্ষেত, বাঁশের সাকো পার হওয়া খুব ই উপভোগ্য ছিল ব্যাপারগুলা।
বাজারে এসে সবাই সেই
সুস্বাদু মহিষের মিষ্টি আর লুচি খেলাম। এরপর রিসোর্ট এ যেয়ে শুরু হল গান বাজনা।
বরাবরের মর এইবারও আমার সাথে কেউ গানের কলিতে জিততে পারলনা।। হা হা হা
রাতে সেই মজাদার চিংড়ি মাছ
আর হাসের মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে আবার আমরা চললাম নিঝুম বিচ এর পানে। চাদর বালিস সব ই
ছিল সাথে।
বিকেলের নিঝুম বিচ আর রাতের
নিঝুম বিচ সম্পূর্ণ আলাদা। পুরো বিচ এ শুধু আমরা ছিলাম। নিরব, নির্জন যেন কোথাও
কেউ নেই...।
আকাশে মস্ত বড় চাঁদ, হৃদয়
ছুয়ে যাওয়া বাতাস আর লাখো তারার মিতালি
দেখে মনটা আনমনা হয়ে গেল। মনের অজান্তেই যেন গেয়ে উঠলাম...
আমার রাত জাগা তারা, তোমার
অন্য পাড়ায় বাড়ি,
আমি পাইনা ছুতে তোমায়, আমার একলা লাগে
ভারি!!
চলবে...।।
নিঝুম দ্বিপ ( হাতিয়া,
নোয়াখালী)
ফেব্রুয়ারি ২০-২৪, ২০১৮।
(শেষ পর্ব)
খুব সকালে আমাদের গাইড
রাপুল অরফে ছোট্ট বন্ধু এসে আমাদের সবাইকে ঘুম থেকে উথাল। বলতে লাগল “জলদি করেন
নাইলে কইলাম হরিন চইলা যাইব...”
ফ্রেশ হয়ে সবাই ঘুম ঘুম
চোখে আমাদের গন্তব্য ছোঁয়া খালি বন এর দিকে রওনা হলাম। নিখুম দ্বিপ এর সকাল টা
আসলেই অনেক বেশি সুন্দর। নির্জনতার চাদর মুড়ি দেওয়া কোন এক অপরুপ শহর যেন!!
দল বেধে আমরা বন এর ভিতরে
প্রবেশ করলাম। আমাদের বান্ধুবি অনন্যার পশু প্রেম এর জন্য আআমদের সাথে যুক্ত হল ২
টা কুকুর!! যারা সারা রাস্তা আমাদের জ্বালাইয়া মারসে...
কুকুরগুলির ছিল্লা পাল্লায়
হরিন আগেই ভাগসে।। ২-৩ টা হরিন চোখে পরসে মাত্র। কি আর করা, এর মধ্যেই আনন্দ খুজে
নিতে হবে। হতাশ হলে তো আর চলবে না।
আরেকটা মজার কথা না বললেই
না। এই ট্যুর এ আমাদের এক বান্ধুবি প্রায় ৩০০০ ছবি তুলে গিনেস বুক এ নাম
লিখাইসে... তার নাম বললে চাকরি থাকবে না!! হা হা হা ;)
বন থেকে এসে নাস্তা করেই
সবাই লেটানি দিলাম। দুপুরে খেয়ে আমরা কবিরার চর দেখার জন্য বের হলাম। বিশাল চর এ
যেয়ে নিজেকে যেন রাজা মনে হচ্ছিল। একা একা শুয়ে শুয়ে অনেক কিছু ভাবতে লাগলাম...
রাতে বার বি কিউ এর পরে
সবাই মিলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে “যোগসূত্র” বের করলাম, সেই থেকে আমাদের গ্রপ এর নাম
হয়ে গেল যোগসূত্র গ্রুপ!! হা হা হা
শেষ দিন সকালে উঠে সেই
বিখ্যাত রসের লালি দিয়ে পিঠা খেলাম। এরপর মন টা খারাপ করে আবার ট্রলার এ উঠে লঞ্চ
এর উদ্দেশে রওনা দিলাম।
লঞ্চ এ উঠে সবাই অনেক মজা
করলাম আর ভাবলাম ইস! আর কইতা দিন যদি এইভাবে কাতান যেত তাহলে কিন্তু মন্দ হতনা।।
কিন্তু জীবন যুদ্ধে আমরা
সবাই যে একজন সৈনিক।। তাই আবারো সেই যুদ্ধে নামার প্রস্তুতি নিতে হবে ভেবে জলদি
ঘুমিয়ে পরলাম...।।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি
নিঝুম বিচ এ শুয়ে আছি...। ( না সব স্বপ্ন সত্যি হয় না... )
জানি সব সত্যি হয় না,
তবু মন মানতে চায় না...।
ভ্রমন হোক নিরাপদ,
ভালবাসার টি জি বি
নিজেকে ফিরে পাবার ট্যুর...
( নিঝুম দ্বিপ)
Subscribe to:
Posts (Atom)